বরগুনার রিফাত হত্যা ও মিন্নিকে নিয়ে অপরাজনীতি এখন তুঙ্গে

বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ

গত ২৬শে জুন বরগুনা সরকারী কলেজের গেইটের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে সন্ত্রাসীরা রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই সময় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিও ঘটনাস্থলে ছিলেন। এক পর্যায়ে মিন্নি তার স্বামীকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাচানোর জন্য প্রানপন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ঘটনার সময় আশেপাশে থাকা লোকজন এই ঘটনা দেখছিলেন। কিন্তু কেহই রিফাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। এই লোমহর্ষক ঘটনার ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে জনমনে ব্যপক তুলপাড় সৃষ্টি হয়।

এই ঘটনার মূল নায়ক সন্ত্রাসী সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ওরফে বন্ড-০০৭সহ জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন পোষ্টে দেখা যায় অনেকে নয়ন বন্ডসহ জড়িত সকলকে প্রকাশ্যে ফাসি কিংবা গুলি করে হত্যা করার দাবি জানায়। এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সচেতন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের ওপর মহল থেকেও চাপ আসে। ঘটনার ২/৩ দিনের মধ্যই নয়ন বন্ড ক্রস ফায়ারে নিহত হন। সারাদেশের মানুষ নয়নের ক্রস ফায়ারে নিহতের খবরে জারপরনাই খুশী হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নয়ন বন্ড ক্রস ফায়ারে নিহত হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

তবে এই ঘটনাকে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল তারা আগে দাবি করলেও নয়ন বন্ডের নিহতের খবরে খুশী হতে পারেননি। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে যারা আগে নয়ন বন্ডের ক্রস ফায়ার দাবি করেছিল তারাই আবার ক্রস ফায়ারের বিরোধীতা শুরু করে। স্থানীয় সরকার বিরোধী রাজনীতিকরা হত্যাকান্ডটিকে কেন্দ্র করে রাজনীতি শুরু করে এবং সারাদেশে সরকার বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে এটি একটি মুক্ষম অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে।

মূলত রিফাত শরীফের হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয় সামাজিক কারনে। এতে প্রেম-ভালবাসা, বিয়ে, পরকিয়া ইত্যাদি জড়িত। কোন অবস্থাতেই এটি কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয়। কিন্তু দুঃখের বিয়য় অপরাজনীতিবিদরা এটিকে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। আর অনেকে জেনে আবার অনেকে না জেনে বিবেকের বিরুদ্ধে এটি নিয়ে রাজনীতি করছে ও নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে। যা এই হত্যাকান্ডের সুষ্ট বিচারের অন্তরায়। এই সমস্ত বক্তব্য থেকে এই হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। তাই এই হত্যাকান্ডটি নিয়ে রাজনীতি কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়।

নয়ন বন্ড ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের কোন পদ-পদবীতে নাই। কেউ কেউ জানিয়েছেন নয়ন বন্ড আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে সমর্থন করে। কিন্তু কেউ কেউ আবার নয়ন বন্ডকে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন সে যুবলীগ কিংবা আওয়ামীলীগের বড় নেতা। নয়ন বন্ড একেবারেই নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেনীর ছেলে। তার লেখাপড়াও তেমন জানা নাই। তবে সে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে অনেকগুলি মামলা আছে। কিন্তু নয়ন বন্ডকে পত্র পত্রপত্রিকায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সে দাউদ ইব্রাহিম কিংবা এরশাদ সিকদার কিংবা নুর হোসেন। এই সবের পিছনে রাজনৈতিক অভিলাস জড়িত। এরকম নয়ন বন্ড পাড়া মহল্লায় কিংবা গ্রামেগঞ্জে ভুরিভুরি আছে। আর এমন হত্যাকান্ড নিয়ে রাজনীতি পরিহার করা উচিত। নয়ন বন্ড নিহত হবার পর শুরু হয় নতুন রাজনীতি। একটি গোষ্টী মিন্নিকেও এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িয়ে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানায়। এই দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এটিও একটি রাজনীতি। যারা রিফাত হত্যাকান্ডে রিফাতকে বাঁচাতে মিন্নির প্রানপন চেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছে তারাই আবার পল্টি মেরে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে, রিফাত হত্যাকান্ডের সাথে মিন্নি জড়িত তা প্রচার করছে। সত্যিই বিচিত্র এই দেশ ও দেশের মানুষ। অবশেষে মিন্নিকে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত জানিয়ে পুলিশ মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে। একই শ্রেনী আবার মিন্নির গ্রেপ্তারের বিরোধীতা করছে! সেলুকাস! নয়ন বন্ড, রিফাত শরীফ কিংবা মিন্নি কেউই সমাজে প্রতিষ্ঠিত কোন ব্যক্তি বা রাজনীতিবিদের সন্তান না। তথাপিও এদের নিয়ে বরগুনাসহ সারাদেশে রাজনীতি চলছে। আর যারা বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি করছে তারা সকলেই সরকার বিরোধী। এই হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে বগুনার এমপি ধীরেন্দ্র দেব নাথ সম্ভু ও তার ছেলেকে জড়ানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এর মূল উদ্দেশ্য আওয়ামীলীগের স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিকে দুর্বল করা।

সম্প্রতি কুমিল্লার এক আদালতে এক যুবক আরেক যুবককে তাড়া করে বিচারকের খাস কামরায় ছুড়ি দিয়ে হত্যা করে। এটিও কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের কারনেই এমনসব হত্যাকান্ডগুলি ঘটে থাকে। এইসব হত্যাকান্ডের মধ্য রাজনীতিকে টেনে আনা কোন অবস্থাতেই শুভ নয়। অপরাধ অপরাধই, হত্যাকান্ড হত্যাকান্ডই তা সে যে ই করে থাকুক। এই সবের সুষ্ট বিচারই সকলের অরাজনৈতিক দাবি হওয়া উচিত।

প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা ও রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনকে নিয়ে রেলে নিয়োগের নামে ঘুষ কেলেংকারীর কথা সকলেরই মনে থাকার কথা। এই খবর প্রচার হবার পর বিএনপি মহাসসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ২৪ ঘন্টার মধ্য তার বহিস্কার দাবি করেছিলেন। ঠিক ২৪ ঘন্টার মধ্যই প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিস্কার করেছিলেন। এই বহিস্কারের খবর শুনে মির্জা ফখরুল ইসলামই মন্তব্য করেছিলেন “সুরঞ্জিত বলির পাঠা হয়েছে”। রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়ে যখন বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে   জমায়েত হচ্ছিল বর্তমান সরকার প্রথমে বাধা দিয়েছিল। বিএনপি মহাসচিব তখন এই বাধা দেওয়ার কারনে সরকারকে জালিম বলেছিল ও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। সরকার ঠিকই রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দিল মানবিক কারনে। তখন এই ফখরুল ইসলামই রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাল। সবই রাজনীতি। সেলুকাস!

তাই সব কিছু নিয়ে আমাদের অপরাজনীতি করা উচিৎ নয়। তাতে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের স্বার্থে এসব পরিহার করা একান্ত কাম্য। বরগুনার রিফাত হত্যা মামলা তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। আমরা সুষ্ট ও দ্রুত বিচার দাবি করতে পারি। কিন্তু এই বিচার নিয়ে রাজনীতি করে বিচার ব্যবস্থাসহ দেশের ক্ষতি করা সুনাগরিকের কাজ নয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *