১৯ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে
নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
আসামের ধুবড়ী জেলায় মাইকিং করে ভারতীয়দের বড় বন্যার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জানানো হচ্ছে।তা শুনে সীমান্ত উপজেলা নাগেশ্বরীতে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ। ফুলছড়ি-সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়ক বন্ধ। এদিকে সিরাজগঞ্জে বন্যায় ১ জন নিহত হয়েছে।বন্যায় ভাসছে কুড়িগ্রাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘন্টা ব্রক্ষপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদী সমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীসংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলাসমূহের নিম্মাঞ্চল এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীসংলগ্ন রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলা সমূহের নিম্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকার আশেপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা প্রভৃতি নদ-নদীর পানি সমতা্লে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে আগামী ২৪ ঘন্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদী এলাকার সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা সমূহের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ১৯ নদীর পানি।
উত্তরাঞ্চলের ভারত ঘেষা জেলাগুলোতে বন্যার পানি নামছে ধীরলয়ে। এই পানি নেমে আসার ফলে দেশের মধ্যাঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর মধ্যেই যদি আসাম রাজ্য থেকে নতুন করে বন্যার পানি নামতে শুরু করে তাহলে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আবারো অবনতি হবে, যার প্রভাব পড়বে দেশের একটি বড় অঞ্চল জুড়ে। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। সেখানকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। দূর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন দুর্গতরা। বন্যার্তদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত রোগ। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, রেল লাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল রাত সাড়ে আটটায় জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমান্ত লাগোয়া ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ী জেলার গোলকগঞ্জ থানার বেরভাংগী, সাতঘড়িপাড়া, বিন্নারছড়া, বালাডোবা, ঘিওমারী, পাটোয়ামারী, নালেয়ারপাড়সহ বেশকিছু এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয় আগামী দুই-তিনদিনের নতুন করে আসছে ভয়াবহ বন্যা। ঘোষণায় ওই এলাকার মানুষ যাতে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে সে জন্য তাদের পুর্ব প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। চলতি বন্যায় পানি কমতে শুরু করায় বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসতে না আসতেই ভারতীয়দের এ প্রচারে আতংকিত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী ভারতের ওই গ্রামগুলোর বিপরীতে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার বালাবাড়ী, শোলমারী, উত্তর ধনীরামপুর, মধ্য ধনিরামপুর, সরকারটারী, ঝিঞ্জিরা বালার চর, তরিরহাট, ছোট ছড়ারপাড়, নায়েকের হাট, শোভারকুটি গ্রামের বন্যা কবলিত মানুষ।
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে নদ-নদীগুলোর পানি। তবে পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এদিকে সকাল থেকে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাকে বন্যার কারণে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে বলে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাতে জানিয়েছেন, খবরটি সত্য নয়। এ ধরণের কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি।
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। শুক্রবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় গরু চুরি ও ডাকাতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাঁধে আশ্রিতরা খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে চরম কষ্টে দিন পার করছেন। অপরদিকে ফুলছড়ি-সাঘাটা-গাইবান্ধা সড়কের সড়কের উপর দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহনসহ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, জেলায় দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৩ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে নিমজ্জিত ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ আছে।
পাবনার বেড়ায় বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুর করুন মৃত্যু হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার নতুন করে আরো দুইটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এনিয়ে জেলার মোট ৩৩টি ইউনিয়ন এখন বন্যা কবলিত।
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাটে পানি উঠেছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র ও দশানী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর, চরপক্ষীমারী ও চরমুচারিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে।
জামালপুরে যমুনা ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ এবং ইসলামপুর-দুরমুঠ রেলওয়ে ষ্ট্রেশনের মাঝের রেল লাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর মহাসড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে পানি উঠেছে।জেলার ৬৮ইউনিয়নের মধ্যে এ যাবত প্রায় ৩৬ ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে। প্রতিটি বাড়িতে পানি। ত্রাণের জন্য চলছে সর্বত্রই হাহাকার।
মুন্সীগঞ্জে শুক্রবার নিম্নাঞ্চলের আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পদ্মা তীরের বাড়িঘর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পদ্মার পানি শুক্রবার ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আউয়াল জানান, পদ্মার এই পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এদিকে এই সময়ে মাওয়ায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে পদ্মা-যমুনায় পানি আরিচা পয়েন্টে শুক্রবার বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরিচার নিকট যমুনা তীরবর্তী বিদ্যুত্ পোল নির্মাণ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরিচা টারমিনাল, লঞ্চ ঘাট, গরুর হাট, দক্ষিণ শিবালয় এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার ফেরি ঘাট পানিমগ্ন হওয়ায় দ্রুত মেরামত করে যানবাহন লোড-আনলোড করা হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি পারাপারে সময় লাগছে বেশি। তাছাড়া ফেরির স্বল্পতাও রয়েছে। এ কারণে উভয় পাড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় গত কয়েকদিনে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবারের মানুষ।সারাদেশে যে সমস্ত এলাকায় বন্যার সম্বাবনা রয়েছে সে সমস্ত এলাকার মানুষ তা মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে।