ওয়াসার পানি খাওয়া যায় না
বাসাবাড়িতে পাইপ লাইনে ওয়াসা যে পানি দিচ্ছে, তা নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় মুখে তোলা দূরে থাকুক, গোসল কাপড় ধোয়াও সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন।
বাধ্য হয়ে মানুষ ভিড় করছে ওয়াসার গভীর নলকূপের পাশে। অনেকেই মাসিক বন্দোবস্তও করে নিয়েছেন। কেউ কেউ পানি কিনে খাচ্ছেন।রাজধানীর দনিয়া, দোলাইরপাড়, কুতুবখালী, দক্ষিণ কুতুবখালী, নূরপুর, পাটেরবাগ, গোবিন্দপুর ও মেরাজনগর এলাকায় পানির এ সমস্যা পুরনো।ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, সরবরাহ নলে সমস্যা থাকায় পানিতে দুর্গন্ধ হচ্ছে। তবে তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার দোলাইরপাড় বাজারের কাছে ওয়াসার গভীর নলকূপের স্টেশনে গিয়ে পানির নিতে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ভিড় দেখা যায়।উল্টো দিকের ১ নম্বর গলির ১৯৭/এ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা নাসিমা বেগম জানালেন, সারাবছরই পানিতে দুর্গন্ধ গন্ধ থাকে।পানিতে দুর্গন্ধ, ফুটালে পানিতে ফেনা ভাসে। ফুটাইলেও দুর্গন্ধ কমে না,” বলেন তিনি।৩ নম্বর গলির ৬৯৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা রিনা বেগমের অভিযোগ আরও গুরুতর।তিনি বলেন, অনেক সময় পানিতে পোকামাকড় আহে। এইজন্য এতদূর থেকে কষ্ট কইরা হইলেও পানি নিয়া যাই।রান্না করলে খাবারেও গন্ধ থাকে বলে জানালেন কবরস্থান রোডের গৃহবধূ শেলি বেগম।
দোলাইরপাড় বাজারের এই পানির পাম্পের অপারেটর তানজির মেহেদী জানান, আশপাশের মুরাদপুর, শনির আখড়া, দোলাইরপাড় এলাকা থেকেও লোকজন পানি নিতে আসে। অনেকে রিকশা ভ্যানে করে পানি নিয়ে যায়।

রাজধানীর দনিয়ার বর্ণমালা স্কুল সংলগ্ন ওয়াসার গভীর নলকূপ থেকে খাবার পানি নিতে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
“ফজরের নামাজের আগে থেকে লোকজন পানির জন্য আসতে শুরু করেন। রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত পানি নেন। পাম্পের বাইরে আমাদের কর্মকর্তারা দুইটা নল বসাইয়া দিছেন।”
দনিয়ার বর্ণমালা স্কুলসংলগ্ন পাম্পে পানি নিতে আসা দক্ষিণ দনিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, “ওয়াসার সরবরাহ নলের পানি দিয়ে গোসল করাও নিরাপদ নয়। এই পানি দিয়া গোসল করলে চোখ জ্বালাপোড়া করে। মুখে দেওয়া তো দূরের কথা।”
দক্ষিণ কুতুবখালীর সাইজুদ্দিন রোডে দেখা গেল, একটি ভ্যানে বড় বড় ড্রাম ভরে পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভ্যানটি গলিতে গিয়ে থামতেই জার, কলসি নিয়ে ভ্যানের কাছে ছুটছেন গৃহিনীরা।
এখানকার বাসিন্দা নাসিমা বেগম জানালেন ওয়াসার পানির পাম্পে অনেক ভিড়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ভ্যান থেকে পানি কিনেন তিনি।
প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে বিশ লিটার খাওয়ার পানি কিনে নেন বলে জানান তিনি।
অনেকেই পানির জন্য মাসিক বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন জানিয়ে নূরপুরের বাসিন্দা আবদুর রব মোল্লা বলেন,
ওয়াসার নলের পানিতে ড্রেনের পানির মতো ময়লা আসে প্রায়ই। এ পানি দিয়ে রান্নাবান্না, গোসল কিছুই করা যায় না। ফলে পানি কিনে আনতে হয়।”সমস্যার কথা স্বীকার করে ঢাকা ওয়াসার অঞ্চল-৭ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, বিতরণ লাইনে কিছু সমস্যা থাকায় এ অবস্থা।
তিনি বলেন, “এসব এলাকায় অনেক পানির লাইন খালের ওপর দিয়ে নিতে হয়েছে। সম্প্রতি এক্সক্যাভেটর দিয়ে খাল পরিষ্কার করার সময় পানির লাইন কেটে যাওয়ায় নোংরা পানি ঢুকে যেতে পারে।
“তাছাড়া পানির চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন এলাকায় পালা করে পানি দিতে হয়। একদিকে পানি বন্ধ রেখে অন্যদিকে চালু করতে হয়। বন্ধ থাকা অবস্থায় নোংরা পানি পাইপে ঢুকে যায়।”
তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান মিজানুর রহমান।