যে কারনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি বিপুল ভোটে হেরেছে

নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

গাজীপুর জেলা বরাবরই আওয়ামীলীগের দূর্গ হিসাবে পরিচিত। ১৯৯১ সাল থেকে গাজীপুরে এ পর্যন্ত সব কয়টি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। ৯১ সাল থেকে সব কটি সংসদীয় আসনে জিতেছে আওয়ামীলীগ। পরপর ৩ বার টংগী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের এডভোকেট আজমতউল্লাহ। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর পৌরসভার কয়েকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ২০০৯ থেকে পরপর দুইবার তিনি আওয়ামীলীগের এমপি ও মন্ত্রী হিসাবে বেশ সফল ভুমিকা পালন করে আসছেন।

কিন্ত গত গাসিক নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মান্নানের কাছে হেরে যায় আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা ও ৩ বারের টংগী পৌরসভার চেয়ারম্যান আজমতউল্লাহ। আর মান্নানের এই বিজয়ের পিছনে মূল কারন ছিল আওয়ামীলীগের দলীয় অন্তঃকলহ। তখন গাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বেশ কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে  পড়েছিল। তারা কাজ করে দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহর বিপক্ষে। ফলে বিএনপির প্রার্থী মান্নান গাসিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে যায়। তখন নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও আজমত উল্লাহর বিপক্ষে কাজ করেছিলেন।

এবার গাসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমস্ত ভেদাবেদ ভুলে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করেছে। তাই বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হয়েছে। গাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামীলীগ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল। আর সে জন্যই ফলাফল পক্ষে এসেছে। কোন রকমের গোলযোগ ছাড়াই অত্যান্ত শান্তিপূর্ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে বড় ধরনের কোন অনিয়ম লক্ষ করা যায়নি। এখন পর্যন্ত বিএনপি বাদে এই নির্বাচন সকলের কাছেই সুষ্ঠ হয়েছে। রাজনৈতিক কারনেই হয়ত বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্বাচন ও এর ফলাফলকে প্রত্যাখ্যন করা হয়েছে।

তবে যে সমস্ত কারনে বিএনপি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছে তার মধ্য রয়েছে—–

* গাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি অতি মাত্রায় মিথ্যাচার করেছে যা গাজীপুরের ভোটাররা পছন্দ করেনি।

* কেন্দ্র থেকে বিএনপি নেতা রিজভী ও অন্যান্য নেতাদের ব্যপক মিথ্যাচার বিএনপির নৈতিক ভিত দুর্বল করে দিয়েছে। এই বিষয়টিকে ভোটাররা ভালভাবে নেয়নি।

* মান্নান মেয়র নির্বাচিত হয়ে গাজীপুর সিটিতে তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। ফলে বিগত কয়েক বছর যাবৎ গাজীপুরবাসী উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে। তাই এবার উন্নয়নের আশায় নৌকায় ভোট দিয়েছে।

* বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার শারীরিকভাবে অক্ষম। অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি হাটাচলা করতে পারেন না। ফলে তিনি ব্যপক প্রচারনায় অংশ নিতে পারেননি। এই বিষয়টিকেও ভোটাররা ভালভাবে নেয়নি।

* নেতিবাচক ও অলিক  প্রপাকান্ডা দলীয় নেতা-কর্মীদের ভীত দুর্বল করে দিয়েছে। ফলে বিএনপি কর্মী সমর্থকরা আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে ভোটে কাজ করতে পারেনি। এরা ধরে নিয়েছিল জাহাঙ্গীর জয়লাভ করবে।

*বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল বিএনপি এজেন্টদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্রপাকান্ডের ফলে এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে অনিহা প্রকাশ করেছে। তাই কিছু কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টই ছিল না।

*আওয়ামীলীগ সরকারের দেশব্যপী ব্যপক উন্নয়ন এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে। পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বিশাল বিশাল প্রজেক্ট গ্রহন করে অনেকগুলি ইতিমধ্যই বাস্তবায়ন করায় আওয়ামীলীগের প্রতি ভোটারদের আস্তা বেড়ে যায়। ফলে আওয়ামীলীগের ভোট বেড়ে যায় ও বিএনপির ভোট কমে যায়।

*খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিপুল ভোটে বিজয়ও এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *