করোনা ভাইরাস টেস্ট নিয়ে অনিয়ম করায় রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা

নানা অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ ঘোষনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, উত্তরা এবং রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ঢাকা , চলতি বছরের মার্চ থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু গত সোমবার (জুলাই ৬) র‌্যাবের অভিযানে (মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে) রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড. উত্তরা শাখায় (মূল শাখা) বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। আর সেই কারনে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের দুটি শাখা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে দুটি শাখাকেই বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। বেসরকারি এ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, করোনা মহামারীর সঙ্কটকে পুঁজি করে তারা জালিয়াতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রোগীদের ঠকাচ্ছিল, চুক্তি ভঙ্গ করে তারা সরকারের সঙ্গেও প্রতারণা করে আসছিল। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই গত মার্চে রিজেন্ট হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। কিন্তু কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে রোগী ও স্বজনদের পক্ষ থেকে। এর মধ্যেই নমুনা পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার ১৪টি অভিযোগ জমা পড়ে র‌্যাবের হাতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিল ও প্যাড নকল করে সেসব রিপোর্ট তৈরি করা হলেও র‍্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওইসব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসব নমুনা পরীক্ষা করেনি বা রিপোর্টও দেয়নি। 

হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল, কোভিড-১৯ রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য তারা কোনো ফি নেবে না, সরকার ওই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে তারা লাখ লাখ টাকা ফি আদায় করেছে। আবার সেসব রোগীর চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের কাছেও বিল জমা দিয়েছে। সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ভর্তি রোগীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়ার কথা নয় রিজেন্ট হাসপাতালের। আর সে মোতাবেক আইইডিসিআর বা নিপসমের মত সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ৪২০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু সেই পরীক্ষার জন্য তারা জনপ্রতি ৩৫০০ টাকা আদায় করে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর বাইরেও বহু রোগীর কাছ থেকে তারা নমুনা পরীক্ষার জন্য টাকা নিয়েছে, কিন্তু পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে বলে র‌্যাব অভিযোগ করেছে।

র‍্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত সোমবার হাসপাতালটির ৮ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান অফিসেও তালা ঝুলানো হয়েছে। গ্রুপটির কর্ণধারের গাড়িও জব্দ করা হয়েছে।