পিঁয়াজে সৃষ্টি হয়েছে অনেক কবিসাহিত্যিক ও নব্য বুদ্ধিজীবী

বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ
রান্নার জন্য পিঁয়াজ একটি অত্যাবশ্যক উপকরন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে পরিমান পিঁয়াজ দরকার সেই পরিমান দেশে উৎপাদন হয় না। বিধায় বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমান পিঁয়াজ আমদানী করে দেশের চাহিদা মিটাতে হয়। পাশের দেশ ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানী করলে দাম ও সময় দুটিই কম লাগে। আবার এটি একটি দ্রুত পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় এর আমদানী স্বল্প সময়ের মধ্য সম্পূর্ণ করে দ্রুত বাজারে বিক্রি করতে হয়। পিঁয়াজ বেশীদিন মজুদ রাখা যায় না। তাই আমদানীকারকরা ভারত থেকে পিঁয়াজ আমদানীতে বেশী আগ্রহী। ভারত নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা রপ্তানী করে থাকে। এতদিন আমদানী করা পিঁয়াজের সিংহভাগই ছিল ভারতের।
কিছুদিন আগে ভারতে ব্যপক বন্যা হলে পিঁয়াজ চাষে তা প্রভাব ফেলে। ফলে ভারতের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পিঁয়াজ রপ্তানী অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে এক পর্যায়ে ভারত পিঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে হঠাৎ করেই ভারত পিঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করে দিলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পাইকারী বাজারগুলিতে সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় এর দাম হুর হুর করে বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিকল্প বাজার খোঁজতে থাকে। ইতিমধ্য মিশর, তুরস্ক কিংবা অন্য দেশ থেকে কিছু পিঁয়াজ আমদানী করা হয়েছে। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মিশর, তুরস্ক ও অন্যান্য দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানীর জন্য আরো অনেকগুলি এলসি খোলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে তা দেশে এসে পৌছলে পিঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দাম কমে যাবে।
দাম বাড়ার পিছনে আরো একটি কারন রয়েছে-তা হল গুজব বা প্রপাকান্ডা। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর দাম নিয়ে অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলা হচ্ছে। যেমন পিঁয়াজ যখন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তা গুজব ছড়িয়ে বলা হচ্ছে পিঁয়াজের দাম ৭০ টাকা কেজি। আবার যখন পিয়াজ ১০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে তখন আমরা প্রচার করে আসছি পিঁয়াজ ১৩০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এভাবে পিঁয়াজের কেজি এখন ২০০ টাকার ওপরে। আমরা ভোক্তারা অসচেতনভাবেই গুজব ছড়িয়ে তার দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি।
ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পিঁয়াজ নিয়ে অনেক রঙ্গ-রসাত্বক কথাবার্তা চলছে। অনেকে পিঁয়াজ নিয়ে কবিতা লিখে যাচ্ছেন অনবরত। এরা পিঁয়াজের উচ্চ দামের বদৌলতে নিজেকে একেবারে কবি বানিয়ে ফেলেছে। এদেরকে পিঁয়াজ কবিও বলা যেতে পারে। আবার অনেকে পিঁয়াজ নিয়ে বিশদ গদ্যও লিখে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। যেন পিঁয়াজের উচ্চ মূল্যের কারনেই তারা লেখক হয়ে গেছেন। আবার পিঁয়াজের উচ্চ মূল্যে অনেককে আনন্দও দিচ্ছে। তাই তারা পিঁয়াজকে মনের মাধুরী মিশিয়ে নানাভাবে উপস্থাপন করছেন। আবার অনেকে গিন্নীর সাথে পিঁয়াজ নিয়ে ঝগড়া বিবাদের কথাও লিখে যাচ্ছেন-এসবই হল রম্য রচনা। তবে আবার দু-একজনকে ইতিবাচক মন্তব্য করতেও দেখা গেছে ফেসবুকে। একজন লিখেছেন, আসুন আমরা ৭ দিন পিঁয়াজ কেনা বন্ধ রাখি। তাহলে দেখবেন সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাবে এবং এর দামও কমে আসবে। আসলেই আমরা যদি ১৫ দিন পিঁয়াজ কিনা বন্ধ রাখি তা হলে এর দাম অবশ্যই যুক্তিক পর্যায়ে পৌছাবে। পিঁয়াজ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য একেবারেই কাম্য নয়। জাহাজে করে তুরস্ক থেকে পিঁয়াজ আনতেও ৩০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। তবে পিঁয়াজের দাম লাগামে রাখতে সরকার তথা প্রশাসন যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।