হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ঘটনাবহুল জীবন বৃন্তান্ত

বিডি খবর ৩৬৫ ডটকমঃ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ও নিন্দিত-নন্দিত সাবেক সেনা শাসক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রবিবার সকাল পৌনে আটটায় (১৪-০৭-২০১৯) সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেকে শোক জানিয়েছেন। এরশাদের জন্ম-মৃত্যু ঘটনা বহুল জীবন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্য যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। নিন্মে তার ঘটনাবহুল জীবন বৃতান্ত দেওয়া হল-

সাবেক প্রেসিডেন্ট, সেনা শাসক, সেনাবাহিনীর প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের কোচবিহার জেলার দেবহাটা শহরে ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন ও মাতার নাম মাজিদা খাতুন। এরশাদের পিতা মকবুল হোসেন অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার রাজার রাজ্যসভার মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদ সাহেবেরা মোট ৯ ভাই-বোন। তাদের মধ্য মোজাম্মেল হোসেন লালু ও জিএম কাদের সুপরিচিত।

১৯৪৮ সালে দেশ বিভাগের পর এরশাদের পরিবার ভারতের কোচবিহার থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রংপুরে চলে আসেন। এরশাদ রংপুরের কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৫০ সালে। ১৯৫২ সালে এরশাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান আমলে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেন অফিসার হিসাবে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন ও একপর্যায়ে বন্দী ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন ও বাংলাদেশ আর্মিতে যোগদান করেন। এই সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একদিকে ছিলেন যারা স্বাধিনতা যুদ্ধে সরাসরি বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়েছেন তারা ও অপরদিকে যে সমস্ত বাংলাদেশি সেনা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানে ছিল কিংবা পাকিস্তানে বন্দী ছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয় এই বিষয়টিকে নিয়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘটনা প্রবাহে এক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন ও পরে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেই দেশের শাসনভার গ্রহন করেন ও সামরিক আইন জারি করেন। এই সময় জিয়াউর রহমান এরশাদকে সেনাবাহিনীর ডেপুর্টি চিফ হিসাবে পদায়ন করেন। হা না ভোটের মাধ্য রাষ্ট্রপতি হয়ে জিয়াউর রহমান এরশাদকে সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। চট্রগ্রাম সেনানিবাসে জিয়াউর রহমান নিহত হলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন বিচারপতি সাত্তার। এই সময় এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন।

১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ এরশাদ নিজেকে চীফ মার্শাল ঘোষনা করে মার্শাল ল জারি করেন। এই সময় তিনি বিচারপতি সাত্তারকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। পরে ১৯৮৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর এরশাদ প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৯০ সালে গন অভ্যুথানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন এরশাদ। পরে দীর্ঘদিন তিনি কারাবন্দী ছিলেন। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তিনি তার প্রতিষ্টিত জাতীয় পার্টির প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। অবশেষে ৯০ বসর বয়সে সম্মিলিত সামরিক হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল পৌনে আটটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করেন। ( ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৩০-১৪ই জুলাই ২০১৯)

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *