ইদানিং ছাত্রদের মাঝে খুব দ্রুত নেতা বনে যাবার প্রবনতা লক্ষ করা যাচ্ছে
বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই প্রবনতা ব্যপকভাবে লক্ষ করা গেছে। কয়েক মাস পূর্বে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে প্রথমে এর প্রতিবাদে ঢাকায় তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। পরে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে যানবাহনে ব্যপক ভাংচুর চালানো হয়। এক পর্যায়ে এই আন্দোলন সহিংস্র রূপ ধারন করে। এই পরিপেক্ষিতে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হলেও থামছিল না এই আন্দোলন। অবশেষে বল প্রয়োগ করে এই আন্দোলন থামানো হয়। তার আগে এই আন্দোলনে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। এই আন্দোলনে ঢুকে পড়ে সরকার বিরোধী দলগুলি যার ফলে এই আন্দোলন সহিংস্র হয়ে উঠেছিল।
কয়েকদিন আগে রাজধানীর নদ্দায় রাস্তা পাড় হওয়ার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হলে এর প্রতিবাদে আবারও প্রথমে নদ্দায় ঘটনাস্থলে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে ছাত্ররা। এই খবরে ঘটনার দিন ও তার পরদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে রাখে ছাত্ররা। ফলে ঢাকায় জীবন যাত্রা আবার অচল হয়ে পড়ে। ফেসবুকের মধ্যমে নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়াতে থাকে। ছাত্রদের একটি পক্ষ ঢাকা উত্তরের মেয়রের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে এই আন্দোলন স্থগিত ঘোষনা করে। কিন্তু আরেকটি পক্ষ এই আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষনা দেয়। ঘটনার দিন বিকালে নব নির্বাচিত ঢাকসু ভিপিসহ তার মতাদর্শী ছাত্ররা নদ্দায় এসে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে একাত্বতা ঘোষনা করে। ভিপি নুর এই সময় আন্দোলনরতদের উদেশ্য বলেন, যদি এই আন্দোলনে কেউ হামলা করে তাহলে এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্য ছাত্রদেরকে উস্কানি দেওয়ার সামিল বলেই অভিজ্ঞ জনেরা মনে করেন। যা হউক আল্লাহর অশেষ রহমতে এই আন্দোলন দুইদিনের মাথায় স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দেশ ও দেশের মানুষ বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে বেঁচে যায়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সমস্ত আন্দোলনে কিছু ছাত্রকে অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। অনেকে এই সমস্ত আন্দোলনে সহজে নেতা বনে যাবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে এই আন্দোলনগুলিতে ঝাপিয়ে পড়ে। এই আন্দোলনকে শানিত করার জন্য সরকার বিরোধী মিডিয়াগুলি অনুঘটকের কাজ করতে থাকে। যে কোন ভাবেই কোন মানুষের মৃত্যু কাম্য নয়। যদিও মানুষের মৃত্যু অবধারিত, ঘটনা শুধুমাত্র উছিলা। ছোট্র এই শহরে বাস করে দুই কোটি মানুষ। যেখানে এই বিপুল জনগোষ্টির জন্য পুরা শহরের সমান শুধু রাস্তাই দরকার। এই শহরে প্রতিদিন কিছু দুর্ঘটনা ঘটবেই যত ভাল গাড়ি কিংবা ড্রাইভারই হউক না কেনো। এই সমস্ত ঘটনায় কিছু মানুষের মৃত্যু ঘটবে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কিছু মানুষ মোটিভেটেড হয়ে এই সমস্ত আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যায়। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, সরকারও এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে এই সমস্ত আন্দোলনে সমর্থন দেয়। দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সরকার এমনটি করে থাকে। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আছে যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায় না? সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কি এককভাবে গাড়ি কিংবা ড্রাইভারই দায়ী? পথচারী কি ভুল করে না?
প্রতি দিনই নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় সারা দেশে একাধিক মানুষ মৃত্যু বরন করে থাকে। এ সমস্ত ঘটনায় ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, শ্রমিক কিংবা দিন মুজুর, পিতা-মাতা, ছাত্র-শিক্ষক সকলেই তো মারা যাচ্ছে। শুধু ছাত্র মারা গেলেই আন্দোলন হবে কেনো? পিতা-মাতা কিংবা শিক্ষক মারা গেলে আন্দোলন হবে না কেনো? তাহলে কি ছাত্র বাদে অন্যদের জানের কোন মূল্য নাই। নিশ্চয়ই মূল্য আছে, তবে ছাত্রদের উস্কে দিয়ে সহজেই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা ও সহজে রাতারাতি নেতা বনে যাওয়া যায়। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সমস্ত আন্দোলন গড়ে উঠে। তবে এই প্রবনতার অবসান হওয়া উচিৎ। অপরদিকে এই দুর্ঘটনার অন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওয়াতায় এনে দ্রুত সময়ে বিচার করা সময়ের দাবি। কেউ মারা গেলে আন্দোলনের নামে রাস্তায় খেলায় মেতে উঠে জনগনের জীবন যাত্রা ব্যহত করাও কাম্য নয়।