নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিএনপির অপকৌশলগুলি আর কাজে আসছে না

নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
পচাত্তরের পনের আগষ্টের পর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে এদেশের সহজ সরল মানুষকে বিভ্রান্ত ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে জনমতকে নিজেদের দিকে টেনে নিতে শতভাগ সফল হয়েছিল। ফলে পচাত্তরের পরে ৯১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা সব কটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল।এই সমস্ত অপপ্রচারের মধ্য অন্যতম ছিল আওয়ামীলীগকে নাস্তিকের দল হিসাবে প্রচার করা। তৎকালীন জনসমাজ এই অপপ্রচারকে সত্যি বলে ধরে নিয়েছিল জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে। তখন আওয়ামীলীগের সাথে ভারতকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হত। জামাতে ইসলামীকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের পরে এই অপপ্রচার আরো বাড়তে থাকে। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে আওয়ামীলীগ বিরোধী প্রচারনা চালানো হত। আর ওই সময় থেকেই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শিক্ষা দীক্ষায় পশ্চাতপদ দেশের বিভিন্নস্থানে এই অপপ্রচার ছিল সীমাহীন। ফলে এ সমস্ত স্থানের জনগোষ্টী ছিল তীব্র আওয়ামীলীগ বিরোধী।
সেই সময় বলা হত, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে দেশ ভারত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আওয়ামীলীগ বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিবে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই এই অপপ্রচারে অর্থ ও অন্যান্য রসদের যোগান দিত। এমন কি ৯১ সালের নির্বাচনেও এসমস্ত অপপ্রচার ব্যপকভাবে করা হয়েছিল। ফলে সাধারন জনমত ছিল আওয়ামীলীগের বিপক্ষে। ফলে ৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে বিএনপির থেকে বেশী ভোট পেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারেনি।
আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের আরেকটি অপপ্রচার ছিল আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে দেশের মসজিদগুলি মন্দির হয়ে যাবে, আজানের পরিবর্তে মসজিদে ওলো ধ্বর্নি শুনা যাবে। এদেশের বিশাল এক জনগোষ্টি এই অপপ্রচারকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল। ফলে এরা আওয়ামীলীগের তীব্র বিরোধী ছিল। ৯৬ সালে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জনগনের সমর্থন নিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলো। ২০০১ সালের নির্বাচনে কুকুরের মাথায় টুপি পড়িয়ে আওয়ামীলীগকে জড়িয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হল। এই বিষয়টি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ব্যপক দাগ কেটেছিল। ফলে জনমত আওয়ামীলগীর বিপক্ষে চলে যায়। ক্ষমতায় আসে বিএনপি জামাত জোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই জোট আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে একই অপপ্রচার চালিয়ে ব্যর্থ হল। অধিকাংশ জনতা ইতিমধ্য বুজতে সক্ষম হল যে, আসলেই এসব আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার মাত্র। বিএনপি জোট শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাবার জন্য এহেন মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরংষ্কুশ সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগ সারাদেশে ব্যপক উন্নয়ন সাধন করে যা জনগনের নজর কাড়ে। শেখ হাসিনার সরকার দেশকে এক নতুন চূড়ায় নিয়ে যায়। দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়তে থাকে। জনগন প্রকৃত উন্নয়ন কি তা বুজতে পারে। আর আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তাও জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট নির্বাচন বয়কট করে তা বাঞ্চালের ঘোষনা দেয়। কিন্তু নিয়ম মাফিক যথা সময়ে নির্বাচন হয়ে যায়, আবারও আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে। দেশ এগিয়ে যায় অনেক দূর, দেশবাসী এখন আর স্বপ্ন না, বাস্তব উন্নয়ন দেখে। অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। আওয়ামীলীগ সরকারের সুনাম এখন সারা বিশ্ব জুড়ে।
আসে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন। বিএনপিসহ সকল দলই এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে। জনগনের চোখে আওয়ামীলীগের ব্যপক উন্নয়ন ভেসে উঠে। আওয়ামীলীগ জাতিকে অতীতে যে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল তা বাস্তবায়ন করে। আওয়ামীলীগকে এদেশ শাসনের জন্য উপযুক্ত মনে করে মানুষ। তাই এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে ব্যপক হারে ভোট পড়ে। ফলে ব্যপক সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে আবারো আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট মাত্র ৮টি আসনে জয় লাভ করে।
বিএনপি জোটের এমন সূচনীয় পরাজয়ের কারন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নির্বাচনে বিএনপি জোট আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপপ্রচার চালাত সেগুলি হালে আর মানুষ সত্য বলে মনে করে না। আর অপপ্রচারই ছিল অতীতে বিএনপি জোটের বিজয়ের অন্যতম কারন। আওয়ামীলীগ ৯৬, ২০০৮, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর এদেশের মসজিদ মসজিদ হিসাবেই থেকে গেছে, বরং এর আরো সংখ্যা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে, মসজিত ভেঙ্গে কোথাও মন্দির হয়নি, মসজিদে ওলো ধ্বর্নিও কেউ কোন দিন শুনেনি, তিনবার ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামীলীগ ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করেনি। জনগন বুজতে পেরেছে কারা জনগনের প্রকৃত বন্ধু। তাই আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিএনপি জোটের মিথ্যা ও অপপ্রচার শুধুই ক্ষমতায় যাবার জন্য প্রতারনা-এই বাস্তব সত্যটা এদেশের মানুষ মনেপ্রানে গ্রহন করেছে বিধায় বিএনপি জোটের নির্বাচনে এমন সূচনীয় পরাজয় ঘটেছে।