পোষাক শিল্পে শ্রমিকরা নৈরাজ্য চালাচ্ছে
নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
তৈরী পোষাক শিল্প নিয়ে আবারো গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন এই শিল্পে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করলেও আবারো নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। গত রবিবার থেকে পোষাক শ্রমিকরা কোন রকম পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই আবার ধর্মঘট শুরু করেছে। এই খানেই শেষ নয়। নানা দাবি নিয়ে ও অনেকে কোন রকম দাবি ছাড়াই রাস্তায় নেমে এসে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর ফলে গত রবি, সোম ও মঙ্গলবার এরা বিমান বন্দর গোল চক্কর ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়ে রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান করে।
শ্রমিকদের এই অবরোধের ফলে গত তিন দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এর মধ্য বুধবার শ্রমিকরা বিমান বন্দর সড়কে এনা পরিবহনের একটি বাস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এই সময় বনানীর কাকলী থেকে টঙ্গি পর্যন্ত যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেটে কাকলী থেকে বিমান বন্দর কিংবা টঙ্গি পর্যন্ত যাতায়ত করে। বিদেশগামী যাত্রীরা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। অনেক দূর থেকে তাদেরকে পায়ে হেটে মাথায় লাগেজ নিয়ে বিমান বন্দর যেতে হয়েছে। আবার বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদেরকে বিমান বন্দরেই দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে।
এদিকে এই ধর্মঘট গাজিপুর আশুলিয়া ও সাভারেও ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল সাভারের ওলাইলে সহিংসতা চালানোর সময় আনলিমা টেক্সটাইলের সামনে পুলিশের গুলিতে কারখানাটির একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সাভারের হেমায়েতপুরেও অরাজকতা চালানোর সময় দুই নারী শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
আজও শ্রমিকরা উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিনখানের বিভিন্ন কারখানা থেকে এসে বিমান বন্দর সড়কে উঠার চেষ্টা করে। পুলিশ শ্রমিকদেরকে মেইন রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরেও শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকগুলি গার্মেন্টসে ইতিমধ্য সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্য কঠোর হস্তে ধমন করার ঘোষনা এসেছে।
গত নভেম্বর মাসে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্ময়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার পোষাক শ্রমিকদের জন্য নিন্মতম মজুরী ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন এই বেতন স্কেল কার্যকর হবার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের বেতন জানুয়ারী মাসে পাবার কথা। পোষাক কারখানার মালিকরা সাধারনত ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্য বেতন দিয়ে থাকেন। সেই অনুযায়ী সোমবার থেকে তাদের নতুন স্কেলে বেতন পাবার কথা। কিন্ত একদিন আগে রোববার শ্রমিকরা কারাখানায় তালা ঝুলিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এদিকে মালিকরা জানিয়েছেন, তারা সরকার নির্ধারিত হারেই বেতন পরিশোধ করছেন। সরকার, মালিক ও শ্রমিকের সমন্ময়ে একটি নতুন কমিটি গঠন করেছে। যদি কোন বেতন বৈষম্য থাকে তাহলে এক মাসের মধ্য তা দূর করার ঘোষনা দিয়েছে সরকার। তারপরেও কোথাও কোথাও বিভ্রান্ত হয়ে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে রাস্তায় বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টি করছে শ্রমিকরা। এতে ব্যবসাসহ অন্যান্য খাতে দেশের অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এই সবের পিছনে কোন দুষ্টচক্র কাজ করছে বলে সরকার মনে করছে। তাই এই সেক্টর আবার অশান্ত হয়ে পড়েছে। অতীতে এই শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য দেশী-বিদেশী চক্র কাজ করেছে। এই চক্র এখনও সক্রিয় আছে। তাই এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য মালিক, শ্রমিক ও সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনকারী এই শিল্পের সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিক একসাথে কাজ করে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে সকল পক্ষের অপুরনীয় ক্ষতি হবে।