বিএনপি জোটের সূচনীয় হারের প্রধান প্রধান কারনগুলি

নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

২৯৯টি আসনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সূচনীয় পরাজয় ঘটেছে। এমন সূচনীয় পরাজয়ের কারন অনুসন্ধানে জানা যায় নেতিবাচক আচার আচরনের জন্যই এমন সূচনীয় পরাজয় ঘটেছে ঐক্য ফ্রন্ট তথা বিএনপির। ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে এই জোট মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে। এর মধ্য বিএনপি পেয়েছে মাত্র ৫টি আসন ও গনফোরাম ২টি আসন। অপরদিকে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে ২৮৮টি আসন লাভ করে ব্যপক সংখ্যা গরিষ্টতা পেয়েছে। এর মধ্য আওয়ামীলীগই পেয়েছে ২৫৯টি আসন। আর আওয়ামীলীগ থেকে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তারা ৭টি আসনে জয় লাভ করেছে। সব মিলিয়ে আওয়ামীলীগের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬৬টি। আসুন বিএনপির ভরাডুবির কারনগুলি কি তা বের করি ………

মানুষ বিএনপির ২০১৩/১৪ ও ১৫ সালের পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার সমর্থন করে নাই। তাই তারা এই নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

সরকারের উন্নয়নের বিপরীতে বিএনপি জোট ব্যপক মিথ্যাচার করেছে। যে উন্নয়ন জনগনের কাছে দৃশ্যমান ও জনগন যার সুফল পাচ্ছে তা অস্বীকার করে শুধু নেতিবাচক প্রচারনাই চালিয়েছে বিএনপি ও তার জোট। এই বিষয়টি সাধারন মানুষ ভালভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

আদালতের রায়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে দন্ডিত হলেও বিএনপি নেতৃত্ব এই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে সাফাই গেয়েছে ও গেয়ে যাচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্ব পুরো আদালত ব্যবস্থাকেই কুলশিত করার চেষ্টা করেছে। বিএনপির পক্ষে রায় না গেলেই তারা আদালতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। এই বিষয়টি সাধারন ভোটাররা ভালভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

একজন প্রধান বিচারপতির পক্ষ অবলম্ভন করে পুরো বিচার ব্যবস্থাকে কুলশিত করার চেষ্টাকে মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই। কোন অপরাধীকে যদি পুলিশ ধরে ও সে যদি বিএনপির লোক হয়, দলটি এটিকে রাজনৈতিক গ্রেপ্তার বা মামলা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এটি সাধারন ভোটাররা স্বাভাবিকভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতা নিয়ে দলটি ব্যপক মিথ্যাচার করেছে। এই বিষয়টিকে সাধারন ভোটাররা ভালভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই। বিএনপিতে কোন আত্নসমালোচনা হয় না। তাই এই বিষয়টিও মানুষ ভালভাবে নেয় নাই।

ডঃ কামাল হোসেনের সাথে বিএনপির ঐক্য কিংবা বিএনপির সাথে কামাল হোসেনের ঐক্যকে মানুষ ভাল চোখে দেখে নাই। এই ঐক্য প্রক্রিয়াকে মানুষ নেতিবাচকভাবে দেখেছে। মানুষ দেখেছে এই ঐক্যের পিছনে শুধু ক্ষমতাই মূল কারন। তাই মানুষ এই ঐক্যকে ভালভাবে নেয় নাই। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

অতীতে আওয়ামীলীগকে নিয়ে বিএনপি ও তার জোট সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে। কারনে অকারনে তারা এখানে ভারতকে টেনে এনেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিবে, মসজিদে ওলো ধ্বর্নি দিবে, মুসলমানরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে না। এই সমস্ত কিছুই মিথ্যাচার তা মানুষ বুঝতে পেরেছে। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

স্বাধীনতা বিরোধী জামাতকে সাথে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাবার ঘোষনাকে মানুষ নির্মম রশিকতা মনে করেছে। পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে দেশ শাসন ও পাকিস্তানী ভাবধারা আবার ফিরিয়ে আনাকে মানুষ সমর্থন করে না। জঙ্গি উৎপাদন ও মদদ দেওয়াকে ভোটাররা প্রত্যাখ্যন করেছে। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

জামাতকে সাথে নিয়ে কামাল হোসেনের দেশের মালিকানা দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণাকে প্রতারনা বলে মনে করেছে। দেশের মানুষ দেশের মালিকানা পেয়েছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে। জামাতকে সাথে নিয়ে কামাল হোসেনের এই শ্লোগান জামাতিদের হাতে তথা পাকিস্তানিদের হাতে দেশের মালিকানা তুলে দেওয়ার নামান্তর বলে মনে করেছে। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

স্বাধীনতা বিরোধী জামাতকে সাথে নিয়ে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ দেওয়াকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার সামিল বলে মনে করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। তাই নতুন প্রজন্ম ও দেশের মানুষ বিএনপি জোটকে ভোটদান থেকে ভিরত থেকেছে।

বিএনপি তাদের সমস্ত অপরাধকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে চালিয়ে দেওর চেষ্টা করেছে। এই বিষয়টিকে মানুষ নেতিবাচকভাবে দেখেছে। তাই তারা বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোটকেই অধিক হারে ভোট দিয়েছে। আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ব্যপক গুজব, মিথ্যাচার, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও ভারতের জুজুর ভয় দেখানোই এতোদিন বিএনপির প্রচারনার মূলে ছিল। হালে এসব মিথ্যা দাওয়াই মানুষ আর খায়না। তাই তারা বিএনপিকে ভোট দেয় নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *