নরসিংদীর রায়পুরায় কে পাচ্ছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন
নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
সারা দেশের মত নরসিংদীর রায়পুরাও নির্বাচনী জ্বরে কাপছে। জটিল আকার ধারন করেছে রায়পুরার মনোনয়ন নিয়ে সমীকরণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে পাচ্ছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন? গত এক বছর ধরেই চলছে এর চুলছেড়া বিশ্লেষন। আসলে কেউই বলতে পারছে না কে নৌকার মনোনয়ন পাবেন।
বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদের বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতার কারনেই এই জটিল অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। অনেকে মনে করতেন হয়ত তিনি আর নির্বাচন করবেন না। ফলে তার স্থান পুরন করতে একাধিক প্রার্থী এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু রাজিউদ্দিন আহমেদ অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচন করবেন। তিনি ৫ বার বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ উপজেলা রায়পুরার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ৯৬-২০০১, ২০০১-২০০৬, ২০০৮-২০১৪ ও ২০১৪-২০১৮(চলমান) মিয়াদে তিনি রায়পুরার সর্বত্র ব্যপক উন্নয়ন সাধন করেছেন। রায়পুরার ভৌত অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন রকমের সরকারি স্থাপনাসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে রায়পুরার চর এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি ব্যপক ভুমিকা রেখেছেন।
আর এই জন্য আওয়ামীলীগের বাইরেও তার ব্যপক জনসমর্থন রয়েছে। রায়পুরার কিছু কিছু ইউনিয়নে তিনি একচেটিয়া ভোট পান। তাই দলের তৃনমূল চাচ্ছে তিনিই মনোনয়ন পান। আর তিনি মনোনয়ন পেলে ব্যপক ভোটে জয়লাভ করবেন বলে তৃনমুল আওয়ামীলীগসহ রায়পুরার অধিকাংশ ভোটাররা মনে করেন। তবে আরো কয়েকজন প্রার্থী আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন। এদের মধ্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশিদ অন্যতম। অপরদিকে রাজিউদ্দিন আহমেদের ছোট ভাই সালাউদ্দিনও এবার প্রার্থী হয়েছেন।
সালাউদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্টাকালীন সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়াও ভাই রাজিউদ্দিন আহমেদের নির্বাচনে জয়লাভের ক্ষেত্রে তিনি ব্যপক ভুমিকা রেখেছেন। আওয়ামীলীগের তৃনমূলের সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। অপর প্রার্থী আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সদস্য এডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার। আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। এ ছাড়া আরো একজন প্রার্থী রয়েছেন ব্যারিস্টার তওফিক আহমেদ। তবে তিনি শক্তিশালী প্রার্থী নন। সেনা শাসিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তার বিতর্কিত ভুমিকা রয়েছে।
আসলে আওয়ামীলীগের মুল মনোনয়ন প্রার্থী ৪ জনকে ধরা যায়। এরা হলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ, হারুন অর রশিদ, সালাউদ্দিন আহমেদ ও রিয়াজুল কবির কাওছার। আসুন দেখা যাক কার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী—-
আওয়ামীলীগের তৃনমুল ও সাধারন ভোটাররা মনে করেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তিনি মনোনয়ন পেলেই রায়পুরার আসনটি নিশ্চিত জিতা যাবে। সারা রায়পুরায় তার প্রস্তুত করা ভোট ক্ষেত্র রয়েছে। অপরদিকে হারুন অর রশিদও শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি হয়ত আওয়ামীলীগের সকল ভোট পাবেন। কিন্তু সাধারন মানুষের ভোট হয়ত তিনি খুব বেশী পাবেন না। এ ছাড়া নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন কি না সেটি নির্বাচনের পরে বুঝা যাবে।
আরেক প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ বড় ভাইয়ের নির্বাচনের সুবাধে গত ১৯৯০ সাল থেকে চষে বেড়িয়েছেন রায়পুরার প্রতিটি এলাকায়। ভোটার ও দলীয় তৃনমূলের সাথে তার যোগাযোগ অনেকদিন থেকেই আছে। যদি রাজিউদ্দিন আহমেদ কোন কারনে নমিনেশন না পান কিংবা না নেন তাহলে হয়ত তিনি ভাই সালাউদ্দিনকেই তার বিকল্প মনে করবেন। কারন কেন্দ্র তখন তার মতামত নিয়েই নমিনেশন প্রদান করবে। আর এ ক্ষেত্রে রাজিউদ্দিনও তার ভাইয়ের জন্য আন্তরিকভাবে ভোট চাইবেন। সেই ক্ষেত্রে রাজু নির্বাচন করলে যে ভোট পাবেন সালাউদ্দিনও হয়ত সে রকম ভোটই পাবেন।
আরেক শক্তিশালী প্রার্থী কাওছার। কেন্দ্রে রয়েছে তার ভাল যোগাযোগ। গত দশ বছরে রায়পুরায় আওয়ামীলীগের যে সমস্ত নেতা কর্মীরা আশানুরুপ পদ কিংবা সুবিদা পাননি কিংবা কোন না কোনভাবে রাজিউদ্দিন কর্তৃক তিরস্কিত হয়েছেন তারাই আছেন মুলত কাওছারের মনোনয়নের পক্ষে। তাকে মনোনয়ন দিলে জিতবে কি হারবে তা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত না। ফলে সমস্ত দিক বিবেচনা করলে রাজিউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আর আওয়ামীলীগের হাইকমান্ডও হয়ত রায়পুরার এই আসনটি হাতছাড়া করতে চাইবে না।