মইনুল হোসেন বনাম মাসুদা ভাট্টি ও রাত আড়াইটায় নারী সিএনজি যাত্রী বনাম পুলিশ

মতামত ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। এই প্রবাদের বিশ্লেষনে পরে আসছি, শিরোনামের দিকে অগ্রসর হই প্রথমে। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নাম এ দেশের প্রায় সকল মানুষই জানে। মিডিয়া বানিজ্যের সুবাদে উনি বাংলাদেশের সকল শ্রেনী, পেশার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম, একটি মুখ। মইনুল হোসেনের পিতা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সকলেই চিনে ও জানে। এই দেশের বরেন্য রাজনীতিবিদদের সাথে ছিল মানিক মিয়ার সুনিবিড় সম্পর্ক। মানুষ মানিক মিয়াকে আজও শ্রদ্ধা ভরে স্বরন করে তার কর্মের জন্য।

তবে মইনুল হোসেনকে মানুষ সমধিক চিনে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে হিসাবেই। মইনুল হোসেন একজন ব্যারিস্টার। তবে আইন পেশায় তার তেমন কোন অবদান নাই। উনাকে মানুষ শুধু নামেই চিনে কিন্তু কোন ভাল আইনজীবী হিসাবে নয়। যদি তিনি কোন মামলায় লড়েন তাহলে প্রভাব বিস্তার করেই ফলাফল পক্ষে নেন। উনি মামলার শুনানী করেছেন খুব কম মামলারই। তবে কোর্টে উপস্থিত থেকে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন প্রায়শই। সাধারন মানুষের মাঝে উনার অবস্থানটা ছিল এরকমই। সমাজ ও রাজনীতির আরো গভীরে যারা বাস করেন তারা মইনুল হোসেনকে অন্যভাবে চিনেন।

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মইনুল হোসেনের বেশ কয়েকটি টকশো দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। প্রথম যখন কয়েক মাস পূর্বে কোন একটি বেসরকারী চ্যানেলে তার টকশো শুনি তখন আমার মনে হয়েছিল যেন পাড়া মহল্লার ছেছরা মাস্তানের টকশো দেখছি। তার কথা বার্তার মান এতই খারাপ ছিল। প্রসঙ্গক্রমে তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুধু ‘হাসিনা’ বলে সম্ভোধন করছিলেন অত্যান্ত শ্রুতিকটু ও দৃষ্টিকটুভাবে। চেহেরায় ছিল পাতি মাস্তানের ভাব। সেদিনই আমি বুঝতে পারলাম লোকটা আসলে শিষ্টাচার বলতে কিছু জানে না। উনাকে মানুষ যেভাবে চিনে উনি আসলে তা না।

সেপ্টেম্বর মাসেও তিনি একবার টকশোতে এসেছিলেন। সেখানেও তিনি জমিদারী ভাব দেখিয়েছিলেন টকশোর সঞ্চালক ও প্রশ্ন কর্তাদের সাথে। প্রশ্ন করার আগেই তিনি রেগে যান। আর চেহেরায় চলে আসে তখন পশুত্ব। লোকটার যোগ্যতা নিয়ে আমার মনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়। আমি বুঝতে পারলাম আসলে এতোদিন আমরা তার সমন্ধে যে ধারনা পোষন করেছি তা সবই ভুল। মাসুদা ভাট্টির প্রশ্নের জবাবে তিনি যে আচরন করেছেন তা পশুকেও হার মানায়। আর তখন সারা জাতির কাছে তার চেহেরা উন্মোচিত হয়ে গেল। উনি যে কত নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোক তিনি টকশোতে না আসলে হয়ত মানুষ বুঝতেই পারতো না। সেই জন্য টকশো আয়োজকদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত যে এই টকশো এর মাধ্যমে মানুষ তার আসল চেহেরা চিনতে পারলো।

একদিকে তিনি টকশোতে মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীনা বলায় ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অপর দিকে তার লোকজন দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসুদা ভাট্টির চরিত্র হরন করা শুরু করলেন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মানহানির মামলা হয়। অবশেষে তাকে আ স ম আব্দুর রবের উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পরদিন আদালতে পাঠায় ডিবি পুলিশ। আদালত মইনুল হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠায়। আর এখন তিনি জেলেই আছেন-শুনেছি প্রথম দিন চল্লিশ জনের সাথে এক কামরায় ছিলেন। তারপরের খবর আর জানা নাই। জেল কোড অনুযায়ী যেভাবে থাকার কথা হয়ত সেভাবেই আছেন।

এই মইনুল সেনা শাসিত তত্ত্বাবধাক সরকারের আমলে দুই নেত্রীকেই জেল খাটিয়েছেন। মইনুল হোসেনের করা মামলায়ই আজ খালেদা জিয়া জেল খাটছেন। মইনুল হোসেনের অসভ্য আচরনের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় দোষী সাবস্ত হলে তার সাজা হবে। কিংবা নির্দোষ প্রমানিত হলে তিনি মুক্তি পাবেন। কিন্তু একটা বিষয় আমার বোদগম্য না বিএনপি কেনো মইনুল হোসেনের অসভ্য আচরনের দায় নিচ্ছে। নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতা কর্মীরা মইনুল হোসেনের পক্ষে কথা বলছে। আবার তারা সেই রাতে রামপুরা চেকপোষ্টে রাত আড়াইটা বাজে সিএনজি যাত্রী এক নারীর কথোপকথনের বিডিও এর বিষয় বস্তুর সাথে সরকারকে কিংবা পুলিশকে মিলিয়ে ফেলে মইনুল হোসেনের পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। শুধু তাই নই মইনুল হোসেনের অপরাধকে হালকা করতে এক শ্রেনীর মানুষ অনেক আগের কিছু লাঞ্চনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ে এসে সরকারকে জরিয়ে নানা রকম কিতসা গেয়ে যাচ্ছেন।

মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ইত্তেফাকের এক কর্মীকেও খুন করানোর অভিযোগ আছে। তত্ত্বাবধাক সরকারের আমলে তার কার্যক্রম মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। সেই সময়ে শেখ হাসিনার কোন সংবাদ মিডিয়ায় প্রচার না করতে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি শাসিয়ে ছিলেন। উনার কেনো আবার জাতীয় ঐক্য জোট করার দরকার হল। তিনি কি বুঝতে পারছেন না এটা ২০০৭ নয়, ২০১৮ সাল চলছে। তাই মনে হচ্ছে পিপিকিলিকার পাখা গজায় আসলেই মরিবার তরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.