হতাশার মহাসাগরে বিএনপি, মনোবল ভেঙ্গে পড়েছে নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সকলের

নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
বিএনপি জন্মের পর থেকে এযাবৎ কালের মধ্য সবচেয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। অতীতে এমন চরম হতাশায় আর কখনো পড়তে দেখা যায়নি জিয়ার প্রতিষ্ঠিত এই দলটিকে। অবশ্য এই অবস্থায় পড়ার পিছনে নানাবিধ কারন রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে নানা ঘটনা প্রবাহ লক্ষ করলে দেখা যায়, বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানোর জন্য প্রধান বিচারপতির বয়স বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিএনপি প্রথম সংকটে পড়ে। এই অবস্থায় আওয়ামীলীগ কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে মেনে নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এই সংকট ঘনীভূত হয়।
দ্বিতীয়বার বিএনপি সংকটে পড়ে তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ যখন নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্বটা বিএনপির ইন্ধনে নিজেই নিয়ে নেন। যার ফলশ্রুতিতে আর্মি বেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পথ সুগম হয়। গ্রেপ্তার হয় শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াসহ আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অসংখ্য নেতা কর্মী। একপর্যায়ে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাসহ উভয় দলের অনেকেই মুক্তিপান। অপরদিকে মুচলেকা দিয়ে তারেক জিয়া দেশ ছাড়েন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয় আওয়ামীলীগ। ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলটি দেশের বিদ্যুৎ খাতসহ অন্যান্য বিভাগে ব্যপক উন্নয়ন সাধন করে।
এরপর আসে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃ বহালের জন্য আন্দোলন করে যা ইতিমধ্যই সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি জাতীয় সংসদেও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকে। এক পর্যায়ে নির্বাচন বয়কট ও প্রতিরোধ করার ঘোষনা দেয়। ৫ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসে। বিএনপি নির্বাচন বানচাল ও প্রতিরোধ করার জন্য ব্যপক জনবিরোধী কার্যক্রম শুরু করে। শুরু হয় ব্যপক জ্বালাও পোড়াও, সারাদেশ নির্বাচন নিয়ে আতংস্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যায় বিএনপির ব্যপক ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। নির্বাচন প্রতিরোধের নামে এমন জ্বালাও পোড়াও মানুষ ভালভাবে নেয়নি। এই নির্বাচন বয়কট ও বানচাল করার চেষ্টা করায় বিএনপি ৩য়বার সংকটে পড়ে।
এরপর আসে ৪র্থ সংকট, ২০১৫ সালে নির্বাচন বার্ষিকিকে কেন্দ্র করে। আওয়ামীলীগ সরকারের অবিলম্বে পদত্যগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধমে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলে বিএনপি জামাত। এই দাবিতে প্রায় তিন মাস সারাদেশ অচল হয়ে পড়ে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলির দেশব্যপী ব্যপক ধ্বংশযজ্ঞের কারনে। সেই সময় শতশত মানুষের মৃত্যু হয় বিএনপি ও জামায়াতের পেট্রল বোমা নিক্ষেপের কারনে। দেশের বার্ন ইউনিটগুলি পুরা মানুষের গন্ধে ভারী হয়ে উঠে, সারাদেশে চলে এই পেট্রল বোমা হামলা। প্রতিদিন শত শত বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্থবির হয়ে পড়ে দেশের জীবন যাত্রা, ব্যবসা বানিজ্য, চরম ভোগান্তি ও ক্ষতি হয় দেশের মানুষের। এইভাবে দেশ ও দেশের মানুষের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি, শুধু ক্ষমতার পালাবদলের জন্য মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। এর মধ্যদিয়ে বিএনপি পড়ে চতুর্থ সংকটে।
আর সবশেষ সংকটে পড়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট মামলায় নিন্ম আদালতের রায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সাঁজার রায়ের মধ্য দিয়ে। ৮ই ফেব্রুয়ারীর রায়ের পর থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন জেলখানায় এই সাঁজা খাটছেন। সর্বোশক্তি দিয়েও বিএনপি এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতদিন বিএনপির ধারনা ছিল জেল খাটার মধ্য দিয়ে খালাদা জিয়া তথা বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ধারনা ছিল দেশবাসী বিএনপিকে সমর্থন কিংবা ভোট দেবার জন্য মুখিয়ে আছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাদের সি ভুল ভেঙ্গেছে। নির্বাচনের এই ফলাফলে বিএনপি যারপরনাই হতাশ হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে ব্যপক উন্নয়ন, দেশের অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ সুবিদা পৌছে দেওয়া, মাথা পিছু আয় ১৬০০ ডলারের ওপরে উন্নীত করা, উত্তরোত্তর জিডিপি বৃদ্ধি, বহু প্রতিকুলতা সত্বেও পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের একমাত্র কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণসহ সবদিক থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জিং কর্মকাণ্ডের কারনে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর ফলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকায় ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে সরকারের এ সমস্ত গনমুখী কর্মকান্ডের প্রতি আস্থা জানিয়েছে ভোটাররা। এতে সরকারী দল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বেজাই চাঙ্গা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ভাল ফলাফল পাবে খুলনার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগন এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারনা। আর এটি বিএনপিও বুঝতে পেরে হতাশ হয়ে পড়েছে। আর এবারের এই হতাশায় বিএনপির মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে বলেই অনেকে ধারনা করছেন। এখন দেখার বিষয় কিভাবে বিএনপি এই মহাসংকট থেকে বেড়িয়ে আসে।