তুলকালাম কান্ড, আদালতের সিদ্ধান্তে যশোর রোডের গাছ কাটা স্থগিত
নিউজ ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
বেশ কয়েকদিন যাবৎ যশোর রোডের গাছ কাটা নিয়ে তুলকালাম কান্ড চলছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই ঝড় উঠেছে। অবস্থা এমন যে, জীবন দিবো তবুও গাছ কাটতে দিবো না। আসুন তা হলে নেপথ্য কারনগুলি জেনে নেই।
প্রথমতঃ যশোর রোড দুইশ বছর আগে তৈরী বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত রোড। এই রোডের অনেক ইতিহাস রয়েছে। তখনকার ওই অঞ্চলের জমিদার এই রোডটি নির্মান করেছিলেন যশোরের সাথে কলিকাতার যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য। রোডটি নির্মিত হওয়ার পর থেকেই যশোরের সাথে কলিকাতার যোগাযোগে ব্যপক ভুমিকা রেখে আসছে প্রাচীন এই রাস্তাটি। এই রাস্তা দিয়েই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। আবার স্বাধীনতার পরও এই রাস্তা দিয়ে মুক্তিকামী মানুষ আবার দেশে ফিরে এসেছে। তাই এই রাস্তাটি বেশ স্মৃতি বিজড়িত।
রাস্তাটি নির্মানের পর সেখানে গাছ লাগিয়ে ছিলেন স্থানীয় জমিদার কালিপদ পোদ্দার। আর সেই গাছগুলির মধ্যে অনেকগুলির বয়স এখন ১৭০ বছরের বেশী। তাই এই গাছগুলিকে নিয়ে মানুষের আবেগ রয়েছে। গাছগুলিকে রক্ষা করা প্রয়োজন বলে অধিকাংশ মানুষ মনে করছে। আর এই নিয়ে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত হয়েছে। হাইকোর্ট যশোর রোডের গাছ কাটা ৬ মাসের জন্য স্থগিত ঘোষনা করেছে।
এখন প্রশ্ন হল গাছগুলি কাটার প্রয়োজন হল কেন? রাস্তা সম্প্রসারনের জন্য গাছগুলি কাটতে চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের ভাষ্যমতে গাছগুলি না কাটলে রাস্তা সম্প্রসারন অনেক জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ ব্যপার হবে। আর এই নিয়েই এই নাটকের সূত্রপাত। অনেকে জেনে বুঝে আবার অনেকে না বুঝেই গাছ কাটার বিরোধীতা শুরু করে দেয়। আবার এই বিষয়টিকে নিয়ে অনেকে রাজনীতি করছে, রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। যেন কোন কিছুর বিরোধীতা করতে পারলেই সহজেই জনপ্রিয়তা লাভ করা যায়। তাই অনেকে বিরোধীতাই করে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হল গাছ কি দেবতা নাকি যে কাটা যাবে না। গাছ না কাটলে তো পুরা পৃথিবীই এক সময় জংগল হয়ে যাবে। তখন বন্যে প্রানীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। আর এক সময় পৃথিবী বন্যে প্রানীর দখলে চলে যাবে। মানব সভ্যতা তখন হুমকিতে পরবে। গাছ কাটার বিরুদ্ধে এমনভাবে আন্দোলন শুরু হয়েছে যে, গাছকাটা মহা অপরাধ। আমাদের এমন একটা ভাব যেন গাছকে মানুষ থেকেও বেশী ভালবাসি। এ ছাড়া যশোর রোডের এই গাছগুলির তো অনেক বয়স হয়েছে। তাহলে কাটলে দোষ কোথায়?
গাছ না কেটে যদি রাস্তা সম্প্রসারন করা হয় তাহলে আবার নতুন করে রাস্তার দুই পাশের কৃষি জমি অধিগ্রহন করতে হবে। তাতে করে কৃষি জমি কমে যাবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহন করতে গেলে জমির মালিকদের সাথে শুরু হবে জটিলতা। তাহলে এখন প্রশ্ন হল গাছের জন্য কি রাস্তা তৈরী করা হয়েছিল? নাকি রাস্তার জন্য গাছ লাগানো হয়েছিল ছায়া এবং গাছ দুটিই পাওয়ার জন্য?
বিষয়টা অনেকটা এরকম যে- মানুষের জন্য পোষাক, নাকি পোষাকের জন্য মানুষ? মানুষে চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা তৈরী করা হয়েছিল। গাছের জন্য রাস্তা তৈরী করা হয় নাই। তাই মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার কথাই আগে ভাবতে হবে। তারপর মানুষের চলাচল, তারপর গাছ ও ছায়া।