মেহেরপুরে এক ব্যবসায়ী তার দুই ছেলে, স্ত্রী ও নাতির মৃত্যুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন
অনলাইন ডেস্কঃবিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
গত বৃহস্পতিবার মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী একটি চিঠি লিখে। চিঠির বিষয়ের জাগায় লেখা আছে তার দুই ছেলে, স্ত্রী ও নাতির মৃত্যুর অনুমতি প্রার্থনা।
আর এই আবেদনপত্রটি পেয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসানও আঁতকে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আবেদনকারী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জনাব তোফাজ্জল হোসেন মেহেরপুর বাজারে একটি দোকানের মালিক ছিলেন। ভালভাবেই চলছিল তার দিন। কিন্তু সর্বস্ব তিনি খুইয়েছেন অসুস্থ দুই ছেলে আর নাতির পেছনে। এরা সকলেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত। চলাফেরায় ব্যপক সমস্যা হয় তাদের। তাদের অবস্থা খারাপেরদিকে যাচ্ছে।
জনাব তোফাজ্জল হোসেন চব্বিশ বছর বয়েসী বড় ছেলেটির বেঁচে থাকবার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ছোট ছেলে এবং নাতির অবস্থা অতটা খারাপ না। সে জন্য তিনি এখনো তাদের বাঁচানোর স্বপ্ন দেখেন। বাজারে তার একটি দোকান ছিল। সেটি বিক্রি করে তিনি তার বড় ছেলে সবুরকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিল, সে বিরল এক ধরণের ‘মাসকুল্যার ডিসট্রোফি’ বা মাংসপেশিতে পুষ্টির অভাবজনিত অসুখে আক্রান্ত এবং এর চিকিৎসা তাদের কাছে নেই। ইতিমধ্যে সবুর চলাফেরা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।
তের বছর বয়েসী ছেলে রায়হানুল ও আট বছর বয়েসী নাতি সৌরভের আবস্থাও ভাল না। আর তার স্ত্রীর রয়েছে মানষিক সমস্যা। তাদের সকলের ভরনপোষন ও ভালমন্দ সবকিছু দেখভালের দায়িত্বও আবার তারই। তাই এরকম দিশেহারা হয়ে তোফাজ্জল হোসেন সরকারের কাছে আবেদন করে্ন, হয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন নচেৎ তাদেরকে ঔষধ খাইয়ে মেরে ফেলার অনুমতি দিন।
বিবিসিকে তোফাজ্জেল হোসেন বলছিলেন, “কি করব বলুন? বড়টাকে আজ চৌদ্দ বছর ধরে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছি। আর পারছি না। সকলেই শয্যাগত হয়ে গেছে। আমরা আর কতদিন টানবো বলেন? এছাড়াতো কোন বিকল্প পথ আমার আর নেই”।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান তোফাজ্জেল হোসেনের সাথে কথা বলেছেন। তার সমস্যার কথা শুনেছেন। তার বাড়ীতে যেয়ে সরেজমিনে সকলের সাথে কথা বলেছেন। অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে তোফাজ্জল হোসেন মূলত তাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়েছেন। জনাব হাসান বিষটি বিভাগীয় কমিশনারকে জানিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে সরকারী তরফে কি করণীয় আছে সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মি. হাসান।
আর তোফাজ্জল হোসেনের এই আবেদনের খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বহু মানুষ তার খবর নিচ্ছেন এবং পাশে দাঁড়াতে চাইছেন। অনেকে বিদেশ থেকেও যোগাযোগ করে সহায়তা করতে চাচ্ছেন। আর এ সময়ে এসে মণে হচ্ছে অসুস্থদের আর বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না। কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।