তেষট্টি বছর বয়সে স্কুলে যাচ্ছেন বাশিরন নেসা
নিউজ ডেস্কঃবিডি খবর ৩৬৫ ডটকম
কখনো পড়া লেখার সুযোগ পাননি মেহেরপুরের বাশিরন নেসা। তার বিয়ে হয়ে যায় আট বছর বয়সে। তারপরেই বাংলাদেশের আরো অনেক নারীর মতো সংসারের কাজ, সন্তান লালন পালন, এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
এক ছেলে দুই মেয়ে তার। এরা বড় হয়ে সংসার করছে। তাই বাশিরন নেসার হাতে এখন অনেক সময়। তিনি আর নিরক্ষর থাকবেন না হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর যেই কথা সেই কাজ। ভর্তি হয়ে গেলেন স্কুলে। বাশিরন নেসা মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দা। স্কুলের ক্লাসের ফাকে একটু সময় দিলেন।
বললেন, “আমি একটু শিক্ষিত হবো। আর কিছু না। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। এখন আমি নিজের স্বাধীন মতো কাজ করি” হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুলে ২০১০ সালে প্রথম ভর্তি হওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের কর্তৃপক্ষ সে বছর তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি । পরের বছর আবার ভর্তি হতে যান। স্কুলের কর্তৃপক্ষ এবার আর তাকে ফেরাতে পারেনি।
বাশিরন নেসার দুই নাতিও তখন তার সাথেই একই স্কুলে যান। তিনি বলছিলেন, “আমি বুড়ো মানুষ। ওরা আমার থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। স্কুল থেকে বেরও হয়ে গেছে”। বাশিরন নেসা বলেন, সবচাইতে ভালো লাগে তার ইসলাম ধর্ম শিক্ষা পড়তে।
ছোট বাচ্চাদের সাথে স্কুলে পড়তে কেমন লাগে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলছিলেন, “ওদের সাথে আমার খুব ভাব। ভাব না থাকলে হয়। ওরা সবাই আমার বান্ধবী”। হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুলে ২০১১ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সবগুলো ক্লাস পাশ করেছেন। রেজিস্ট্রেশন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি মাসের ২০ তারিখ পরীক্ষা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলছেন, “উনি প্রথম যখন আসেন আমরা ভেবেছিলাম বয়স্ক মানুষ। ঠিকমতো কি পারবেন? তাই শুরুতে আগ্রহ দেখাইনি। এখন সকাল ও বিকাল দুই শিফটেই তিনি স্কুলে থাকেন”।সেই সকাল নটায় স্কুলে আসেন বাশিরন নেসা আর বিকেল চারটায় ছুটি হলে বাড়ি যান।
সম্ভবত বাশিরন নেসা প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে এখন সবচাইতে বেশি বয়স্ক শিক্ষার্থী। হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, “পড়াশোনায় সে মোটামুটি। অনেক বয়স হয়েছে। এই বয়সে ইংরেজি আর অংকটা তার জন্য কষ্টকর। তবে বাংলা সে ভালোই শিখেছে”
যাতে সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাটা পাশ করতে পারে সেজন্য তাকে স্কুলে বাড়তি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে বাশিরন নেসা জানিয়েছেন, “এভাবে গল্প করল হবে? আমার পড়াশোনা করতে হবে না?”খবরঃবিবিসি