ভারত-পাকিস্তান দুই দিকেই চরম সতর্কতা, হামলার শঙ্কায় গ্রাম ছাড়ছেন বাসিন্দারা

অনলাইন ডেস্কঃবিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

দুই দেশেরই সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর এ সংকা দেখা দিয়েছে। গতরাত থেকেই ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে ।

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

কলকাতায় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার হামলার পরে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের পালটা হামলার আশঙ্কা।ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে এধরণের কোনও সরকারী নির্দেশ না দেওয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি থেকে বহু মানুষ নিজ-উদ্যোগেই সরে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।এদিকে পাকিস্তান থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন যে সেখানেও সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

অপরদিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সূত্রগুলি বলছে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে তাদের কথায় ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ চালানো হয়েছিল বুধবার রাতে।তারপরে বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রন রেখার অন্য দিক থেকে গুলিবর্ষন হয়েছে ।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জম্মুর ডেপুটি কমিশনার সিমরণদীপ সিংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, অখনূর সেক্টরে পাকিস্তানী ফরোয়ার্ড পোস্ট থেকে গুলি চালানো হয়েছে রাত বারোটা থেকে দেড়টার মধ্যে। পল্লনওয়ালা, চপড়িয়াল আর সমনাম এলাকায় এই গুলি বর্ষণ হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নাই।

আরও পালটা হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পাঞ্জাব আর জম্মু এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল জানাচ্ছেন, “বৃহস্পতিবার সকালেই যখন সার্জিকাল স্ট্রাইকের ব্যাপারে জানানো হয়, তারপরেই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে সরকার।”

স্থানীয় সাংবাদিকরা বিবিসি-কে জানিয়েছেন ছয়টি সীমান্তবর্তী জেলার অন্তত এক হাজার গ্রাম খালি করানো হচ্ছে। মাইকে স্থানীয় গুরুদোয়ারাগুলি থেকে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ।একেক জন করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিটি জেলায় গ্রাম খালি করা এবং মানুষদের দেখভালের জন্য ।সীমান্ত অঞ্চল থেকে চলে আসা জনতাকে স্কুল বা গুরুদোয়ারাগুলোতে রাখা হচ্ছে ।

ind-pak-war

তবে যেসব মানুষদের গ্রাম থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকে বলছেন যে তাঁরা পাকা ফসল ক্ষেতেই রেখে তাদের চলে যেতে হচ্ছে। ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে পাঞ্জাব সরকার। সেখানকার সব পুলিশের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। বিএসএফ-এর একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে সরকারী ভাবে সরে যাওয়ার কোনও নির্দেশ জারি হয় নি, কিন্তু অনেকেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন। বিশেষ করে জম্মু অঞ্চলে গতকাল থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি যেসব মানুষ থাকেন, তাঁদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা রিয়াজ মাশরূর জানাচ্ছেন দুই দেশের যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।এর আগেও যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গেছে, সেইসব সময়ের কথা মনে করে বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, গোলাবর্ষন হলে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্তের মানুষদেরই পড়তে হয়। কখন কার বাড়িতে গোলা এসে পড়বে এ শংকায় মানুষ আতংকগ্রস্ত।

ভারত শুক্রবার জানিয়েছে যে তাদের এক সেনাসদস্য ভুলক্রমে গতকাল নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হওয়ায় তাকে পাকিস্তানী সেনারা আটক করেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর ওই সদস্য চন্দু বাবুলাল চৌহানকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

এদিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীগুলির সূত্রগুলি জানাচ্ছে যে বুধবারের অভিযানের পরে পালটা হামলার মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *