BD Khobor 365

পরস্পরের জন্য সেনা ঘাঁটি খুলে দিল ভারত-আমেরিকা, চিন্তায় বেজিং

অনলাইন ডেস্কঃবিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

বড় মাপের সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হল ভারত ও আমেরিকা। দুই বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশটন কার্টার এ চুক্তিতে সই করেছেন। আমেরিকা শুধুমাত্র স্বীকৃত সামরিক সহযোগী বা সামরিক মিত্র দেশের সঙ্গেই এই চুক্তি করে। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার এই চুক্তিকে তাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক বিরাট মাইলফলক হিসেবে দেখছে নয়াদিল্লী ও ওয়াশিংটন।

সামরিক সহযোগীদের সঙ্গে আমেরিকা যে সব চুক্তি করে থাকে, এই চুক্তি সেগুলির মধ্যে একেবারে প্রাথমিক। অর্থাৎ এই চুক্তি হওয়ার পরই আমেরিকার সঙ্গে অন্যান্য সামরিক চুক্তির দরজা খোলে। তবে সোমবার যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটি হয়েছে, তা ভারত এবং আমেরিকা দু’পক্ষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিন যেভাবে পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভারত বিরোধী বৃত্ত গড়ে তুলতে সক্রিয়, তাতে পাল্টা সামরিক জোট ভারতেরও প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে বেজিং। নয়াদিল্লিও কূটনৈতিক ভাবে তার মোকাবিলা করছে। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের মতে, চিন যে ভাবে সামরিক ভাবে ভারতকে ঘেরার চেষ্টা করছে, তাতে শক্তিশালী সামরিক জোট ভারতেরও প্রয়োজন। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সেই সমঝোতা অনেক দিন ধরেই দানা বাঁধছিল। কিন্তু এ বার সেই সমঝোতা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেল।

পেন্টাগনে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে অভিবাদন মার্কিন বাহিনীর। সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব। ছবি এএফপি।

চিনা আগ্রাসন আমেরিকার কাছেও এখন মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনা নৌসেনা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সচেষ্ট। আমেরিকা তা যে কোনও মূল্যে রুখতে চায়। দক্ষিণ চিন সাগরের ৯০ শতাংশ এলাকাকে নিজেদের জলসীমা বলে দাবি করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে জোর ধাক্কা খেয়েছে চিন। তবু বেজিং হাল ছাড়তে নারাজ। এশিয়া-প্যাসিফিকে চিনা নৌসেনার আধিপত্য খর্ব করার জন্য মার্কিন নৌসেনা নিজেই যথেষ্ট। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে রয়েছে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সামর্থ ভারতীয় নৌসেনা ছাড়া আর কারও নেই। গোটা বিশ্বই সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তাই ভারতের সঙ্গে সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া আমেরিকার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ছিল। ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করার সুযোগ পেলে এবং ভারতীয় নৌসেনার সহযোগিতা পেলে মার্কিন নৌসেনা এই অঞ্চলেও এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে, যে পিপল’স লিবারেশন আর্মি নেভি কোনও ভাবেই এই যৌথ শক্তির সঙ্গে টিকতে পারবে না। বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশই।

নয়াদিল্লী এবং ওয়াশিংটন এই সামরিক চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বসিত। এই চুক্তি হলে ভারতের দীর্ঘ অনুসৃত স্বতন্ত্র সামরিক নীতি ক্ষুণ্ণ হবে বলে কোনও কোনও শিবির মনে করছিল। সে বিষয়ে যাতে কোনও সংশয় না থাকে, তা কিন্তু নয়াদিল্লি নিশ্চিত করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, মার্কিন সেনাকে সর্বক্ষণ ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে থাকতে দিতে হবে বা ভারতে এসে আমেরিকা সেনা ঘাঁটি তৈরি করবে, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু প্রয়োজন মতো আমেরিকা এবং ভারত পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিগুলি ব্যবহার করতে পারবে। অনেক সহজে যৌথ অভিযান চালাতে পারবে।

ভারতের সঙ্গে এই সামরিক চুক্তি আমেরিকার কাছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছিল। অ্যাশটন কার্টার মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছিলেন যে বিষয়গুলিকে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই চুক্তি। স্বাভাবিক ভাবেই পেন্টাগনে খুশির হাওয়া। অন্য দিকে, চিন্তার ভাঁজ বেজিং-এর কপালে। ভারতের মূল ভূখণ্ডে এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন স্থল ও নৌ-ঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনী হাজির হতে পারে ভারত চাইলেই, এমন পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয় চিনের জন্য।খবরঃআনন্দ বাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

No announcement available or all announcement expired.