আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না

অনলাইন ডেস্কঃ বিডি খবর ৩৬৫ ডটকম

স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তার

স্ত্রীর সঙ্গে বাবুল আক্তার

স্ত্রী হত‌্যাকাণ্ডের পর শনিবার  নিজের ফেইসবুক পাতায় প্রথম লেখায় তিনি বলেছেন নিজের মনোবেদনার কথা।

‘যখন মা হারানো মেয়েটার অযথা গড়াগড়ি দিয়ে কান্নার শব্দ কেবল আমিই শুনি, তখন অনেকেই নতুন নতুন গল্প বানাতে ব্যস্ত। আমি তো বর্ম পড়ে নেই, কিন্তু কোলে আছে মা হারা দুই শিশু। আঘাত সইতেও পারি না, রুখতেও পারি না।’

চট্টগ্রাম থেকে বাবুল ঢাকায় বদলি হয়ে আসার কয়েকদিনের মধ‌্যে গত ৫ জুন বন্দর নগরীতে বাসার কাছে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হন তার স্ত্রীমাহমুদা আক্তার মিতু।এরপর  চট্টগ্রামে গিয়ে মামলা করে ছোট্ট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এসে শ্বশুরের বাড়িতে ওঠেন বাবুল।

এরপর নানা গুঞ্জন শুরু হয় যখন হত‌্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ঢাকায় গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বাবুলকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।তাকে সন্দেহের কথাও আসে গণমাধ‌্যমে।এর মধ‌্যে নীরব হয়ে যান বাবুল। পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মস্থলেও তিনি যাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে গেলেও চাকরিতে যোগ দেননি বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।এসব বিষয়ে বাবুল আক্তার মৌন থাকার মধ‌্যেই শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার ফেইসবুক পাতায় দেওয়া স্ট‌্যাটাস  তার বন্ধুদের নজরে আসে।

স্ত্রীর স্মৃতি তুলে ধরে বাবুল লিখেছেন, “এক সুন্দর দিনে সাধারণ এক কিশোরী বউ হয়ে আমার জীবনে এসেছিল। ঘর-সংসার কী অত বুঝত সে তখন? তাকে বুঝে উঠার সবটুকু সাধ্য হয়নি কখনও। কারণ সদাহাস্য চেহারা যার, তার অন্যান্য অনুভূতি ধরতে পারাটা কঠিন।

তারপর যুগের শুরু। এক কিশোরীর নারী হয়ে উঠার সাক্ষী আমি। ছোট ছোট আবদার আর কথাগুলো ক্রমেই দিক পাল্টালো। হাতের নখের আকার পাল্টে গেল আমার খাবারটুকু স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে মিশে গেল তার চব্বিশঘণ্টা, মাস, বছর এবং যুগ। রাতের পর রাত কাজ থেকে ফিরে দেখতাম, মেয়েটি ক্রমেইরূপ হারাচ্ছে রাত জেগে আমার অপেক্ষায় থেকে থেকে। হয়ত ভালোবাসার চেয়ে স্নেহই ছিল বেশি।’

মিতুর দুই সন্তানের মা হওয়ার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব পালনের কথাও লিখেছেন স্বামী বাবুল।

‘আমার সামান্যতম ক্ষতির আশঙ্কায় তার কেঁদে অস্থির হওয়ার সাক্ষী আমি। মেয়েটি কী আসলেই সংসার বুঝেছিল ততদিনে? কারণ আমি জানি, আমি সংসার তখনও বুঝিনি। এরপর অনেকগুলো দিন কেটে গেল আমার, আমাদের জীবনে। নেহায়েত সাধারণ কিশোরীটি তখন নারী। ততদিনেসাধারণ মানুষটির ছোঁয়ায় আমার জীবন অসাধারণ। তখন সে সংসার বোঝে। কিন্তু আমি বুঝি না, এতেই কী এত ক্ষোভ ছিল তার? এত বেশি ক্ষোভ যে ছেড়েই চলে গেল?’

‘আমি তো সংসারই বুঝতাম না। কিন্তু সে সব বুঝত। আগলে ছিল আমাকে। সে চলে গেল, কিন্তু আমার যাওয়ার উপায় রাখল না। সন্তান দুটোআমার বেঁচে থাকার বাধ্যবাধকতা। না হয় হয়তপিছু নিয়ে জানতে চাইতাম, এভাবে যাওয়ার কারণটা।’

‘গোলকধাঁধার মারপ্যাঁচ বুঝার বয়স কী হয়েছে মায়ের মৃত্যুর সাক্ষী ছেলেটার? তার প্রশ্নগুলো সহজ, কিন্তু উত্তর দেওয়ার মতো শব্দ দুষ্প্রাপ্য।’

নানা গুঞ্জনের কারনে নিজের অসহায়ত্বও লেখায় ফুটিয়ে তোলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *