আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যায় ১১ আসামির খালাসের রায় স্থগিত
-
হাই কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খালাস পাওয়া আসামিসহ সবার শাস্তির দাবিতে গাজীপুরে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ (ফাইল ছবি)
আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে স্থগিতাদেশ এসেছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী স্থগিতের আদেশ দেওয়ায় আলোচিত মামলার এই আসামিদের মধ্যে কারাবন্দিরা এখন মুক্তি পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- ফয়সাল, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, খোকন, আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
এদের মধ্যে নিম্ন আদালতের রায়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। আপিলের রায়ে গত ১৫ জুন তাদের খালাস দিয়েছিল হাই কোর্ট।
ওই রায় নিয়ে আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলসহ গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অসন্তোষের প্রেক্ষাপটে স্থগিতাদেশ চেয়ে গত সোমবার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে মঙ্গলবার ওই আবেদনের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ। আসামি পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আবেদনটি শুনানির জন্য ১৪ জুলাই দিন ঠিক করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যামামলায় নিম্ন আদালত বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল।
আপিলের রায়ে হাই কোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
রায়ে সাতজনের সাজা কমিয়ে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ছয় আসামির মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে সেই দণ্ডই বহাল থাকে। যাবজ্জীবনের পলাতক এক আসামি আপিল না করায় তার ক্ষেত্রেও বহাল থাকে একই সাজা।
নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে সাত আসামি হাই কোর্টে খালাস পান। এদের মধ্যে তিনজন পলাতক ও চারজন কারাগারে আছেন।
পলাতক তিনজন হলেন- ফয়সাল, রনি মিয়া ও খোকন। কারাগারে আছেন আমির, জাহাঙ্গীর, লোকমান ও দুলাল।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতদের খালাস পাওয়া চার আসামি হলেন- রাকিব, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর ও মনির।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান বলেন, চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ দেওয়ায় খালাস পাওয়া বন্দি আসামিরা এখন আর মুক্তি পাচ্ছেন না।
খালাস পাওয়া আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে দাবি করে তিনি আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তারা কারামুক্তি পেয়ে আবার পলাতক হতে পারে- এসব বিবেচনায় আবেদন করা হয়েছে।
আহসান উল্লাহ মাস্টার
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন।
মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকায় জনপ্রিয় আহসান উল্লাহ মাস্টার জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন।
ওই ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় দেন।