সফট টার্গেট’ মিশনে হিযবুত তাহরীর: পুলিশ
সফট টার্গেট’ মিশনে হিযবুত তাহরীর: পুলিশ
গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর দেশে ‘সফট টার্গেট’ হত্যা মিশনের তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
সারা দেশে নিজেদের অস্তিত্ব ও কার্যক্রম জানান দেওয়াই তাদের এই মিশনের লক্ষ্য বলেও দাবি করেছেন মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার হোসেন।
গত বুধবার মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে ফাহিমকে ধরে পুলিশে দেয় জনতা।
শনিবার সকালে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচরে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এই তরুণ নিহত হয় বলে দাবি করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিল আদালত।
ফাহিমকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উত্তরার বাসাসহ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষকের ওপর হামলায় জড়িত অন্য পাঁচজনের নাম তিনি জানিয়েছিলেন দাবি করে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়েরও হয়েছিল।
ফাহিম নিহত হওয়ার খবর প্রকাশের পর দুপুরে এসপি সারোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে হিযুবত তাহরীর ‘নিজেদের অস্তিত্ব ও কার্যক্রম জানান দিতে সফট টার্গেট’ মিশনে নেমেছে বলে ফাহিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
‘সফট টার্গেট’র একটি বিবরণও উঠে এসেছে তার কথায়: “দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সকল সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নেই, যারা সমাজে শ্রদ্ধাভাজন,নিরীহ এবং ভালো মানুষ হিসেবে নিজ এলাকায় পরিচিত অর্থাৎ যাদের হত্যা করলে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে- এমন ধরনের নিরাপরাধ মানুষকেই তারা ‘সফট’ বিবেচনা করে মাঠে নেমেছে।”
কলেজশিক্ষককে হত্যাচেষ্টার অন্য পাঁচ আসামি সালমান তাসকিন, শাহরিয়ার হাসান, জাহিন, রায়হান ও মেজবাহ- এরা সবাই দক্ষিণাঞ্চলে গুপ্তহত্যার মিশন নিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
“হিযবুত তাহরীর এই গ্রুপটি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আগামী ১০ দিনে অন্তত ১০টি গুপ্তহত্যার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল,” বলেছেন মাদারীপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ।
শিক্ষক রিপনই তাদের প্রথম টার্গেট ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই চক্রের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদের প্রত্যেকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।”
কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফাহিম উত্তরার দক্ষিণ খানে তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তারা বাবা একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা, মা গৃহিনী।
ফাহিম গত ১১ জুন সকালের পর থেকে নিখোঁজ বলে দক্ষিণ খান থানায় তার বাবা গোলাম ফারুক একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।
ফাহিম তার বাবার মোবাইল ফোনে সর্বশেষ এসএমএসে বলেছিলেন, ‘বিদেশ চলে গেলাম, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে।’
ফাহিমের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তার বাবা।
তবে ফাহিমকে গ্রেপ্তারের পর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, “কলেজের এক বড় ভাই তাকে এই পথে এনেছে। ঢাকার ওই কলেজের সামনে এক লাইব্রেরিতে প্রায়ই তারা বৈঠক করত।”
ঘটনার দিনই ফাহিম মাদারীপুরে এসে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে অনুসরণ শুরু করে বলে বলে জানান পুলিশ সুপার সারোয়ার।